যে কারণে আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হতে পারে আপনার পছন্দ

যখন আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শব্দটি শোনেন, কোন নামটি আপনার মনে প্রথম নাড়া দেয়?
আপনার যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে কোন জানাশোনা থাকে তাহলে প্রথম যে নামটি মনে আসবে, সেটি ক্লিকব্যাংক। আফটার অল, এটিই অ্যাফিলিয়েট ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় নাম। সাইটটির প্রোডাক্ট সংখ্যা অফুরন্ত, আর এর কমিশনের পরিমাণও অনেক বড় (অনেক ক্ষেত্রে ৭৫% পর্যন্তও কমিশন দেয় সাইটটি!), একটু খোঁজ করলে রিকারিং কমিশন সহ অনেক প্রোডাক্টের খোঁজও মিলবে। আর এক্ষেত্রে উক্ত প্রোডাক্টের ক্রেতা যতদিন প্রোডাক্টটি ব্যবহার করবেন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারও ততদিনই কমিশন পেতে থাকবেন !
এত্তসব সুবিধা রেখে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা কেনই বা অন্যকোন সাইটের কিংবা স্পেসিফিক প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট করবেন? না না- অন্যকোথাও যাওয়ার কোন মানেই নেই!
আর আমাজন ডটকম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং? কোন মানেই হয় না! আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং না করার অনেকগুলো কারণ আছে। সেগুলোর কয়েকটা আসলে আলোচনা করি।
অনেক কম কমিশন রেট
একটু আগেই যেমন বলেছি, ক্লিকব্যাংক অনেক প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়! আর আমাজনের অ্যাভারেজ কমিশন রেট মাত্র ৬.৫ শতাংশ! কেবলমাত্র কিছু ডাউনলোডেবল এবং স্পেসিফিক প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে আমাজন সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়। আবার অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার রয়েছে যারা আমাজন থেকে মাত্র ৪ শতাংশ হারে কমিশন পান! ক্লিকব্যাংকের তুলনায় এটি নিতান্তই কম।
কঠিন প্রচারণা নীতি
ক্লিকব্যাংকের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা যেভাবে ইচ্ছা পণ্যের প্রচারণা চালাতে পারেন, ওয়েবসাইট- বিজ্ঞাপন- ইমেইল – সোশ্যাল মিডিয়া সর্বত্রই। খুব বড় ডিজাস্টার না হলে ক্লিকব্যাংকের অ্যাকাউন্ট কখনো বাদ হয়না। কিন্তু আমাজন এক্ষেত্রে বড্ড বেরসিক। আপনি চাইলে যেকোনভাবেই পণ্য প্রচারণা করতে পারবেন না। একটু নীতির বাইরে গেলেই আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যান হয়ে যেতে পারে!
আসলে কি তাই? আমাজন কি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য খুব খারাপ?
আসলে লেখাটি যখন শুরু করেছি তখন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমাজন হেটার হওয়ার একটা চেষ্টা ছিল, তবে এই দুটি নেগেটিভ পয়েন্ট ছাড়া আমাজন অ্যাফিলিয়েটের আর কোন নেগেটিভ পয়েন্ট খুঁজে পেলাম না। সত্যি কথা বলতে, এই দুটি কারণে যদি আপনি আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংকে নেতিবাচক ভাবে নেন, তাহলে বলতেই হয় আপনি ‘মানি অন দ্যা টেবিল’ মিস করছেন!
তবুও আমি আমাজনেই…
আমাজন কম কমিশন দিলেও আমি খুশি। ক্লিকব্যাংক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং তাই খুব একটা চেষ্টা করিনি কোনদিন। আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংকে ভালবাসার কয়েকটি কারণ বলছি!
লোয়ার কমপিটিটিভ প্রোডাক্ট
পৃথিবীতে পাওয়া যায়, এমন অলমোস্ট সব প্রোডাক্টই আমাজন ডটকমে অ্যাভেইলেবল! ক্লিকব্যাংকের প্রোডাক্টগুলো খুবই কম্পিটিটিভ, বিক্রি করাও অনেক কঠিন। আমাজন ডটকমের ইলেকট্রনিক্স প্রডাক্ট ক্যাটেগরি ছাড়া অন্যসব প্রোডাক্টই মিড লেভেল কমপিটিটিভ। এমন কি কিছু ক্যাটেগরির প্রোডাক্ট আছে যেগুলো অনেক কম কমপিটিটিভ। সহজেই তাই আমাজনের প্রোডাক্ট বিক্রি করা যায়।
আর প্রাথমিকভাবে সহজেই ক্লিকব্যাংকে সফলতা পাওয়া যতটা না কঠিন, আমাজন ডটকমের প্রথম সেল আসা তত কঠিন নয়।
এক্স্যাক্ট ম্যাচ কিওয়ার্ড টার্গেট
ধরুন ক্লিকব্যাংকের একটা প্রোডাক্ট প্রমোট করবেন, ‘ওয়েট লস’ ইনফরমেশন প্রোডাক্ট। আপনি কোনভাবেই সরাসরি উক্ত প্রোডাক্টের নামে সার্চ ভলিউম খুঁজে পাবেন না। কিন্তু অধিকাংশ আমাজন প্রোডাক্টের নিজেরই সার্চ ভলিউম আছে। যেমন: আপনি ধরুন আপনি একটি ব্লগ তৈরি করেছেন যেখানে মাউন্টেন বাইক (সাইকেল) নিয়ে লেখালেখি করেন। আপনি আপনার ব্লগটিতে মাউন্টেন বাইক রিলেটেড কিওয়ার্ডে ট্রাফিক তো ড্রাইভ করাতে পারবেনই, সরাসরি মাউন্টেন বাইকের যে স্পেসিফিক ব্র্যান্ডগুলো আছে, সে ব্র্যান্ডনেমেও অনেক সার্চ ভলিউম আছে। আপনি চাইলে স্পেসিফিক সেই ব্যান্ডের নাম দিয়েও ট্রাফিক ড্রাইভ করাতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে ট্রাফিক থেকে বায়ার কনভার্সন রেট অনেক ভাল থাকে।
অনেক ভাল কনভার্সন রেট পাওয়া যায়
ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু আমাজন ডটকমের নাম শোনেননি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না, বিশেষ করে আমাদের মূল টার্গেট মার্কেটে (যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের দেশগুলো)। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রচুর মানুষের আমাজনে অ্যাকাউন্ট আছে। ইন্টারনেটে কেনাকাটার জন্য আমাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত নাম। আর তাই যখনই কেউ আমাজন ডটকমের কোন প্রোডাক্ট রেকমেন্ড করে, তখন ভিজিটররা সেটি অনেক বেশি বিশ্বাস করে, কেনার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। অ্যাফিলিয়েট গুরু দের মতে, ক্লিকব্যাংক প্রোডাক্টগুলোর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি কনভার্সন রেট, এটি পরীক্ষিত।
বাল্ক প্রোডাক্ট বিক্রি
এটাই আমাজনের সবচেয়ে মজার বিষয়। ধরুন, আপনি একটি মাউন্টেন বাইক বিক্রির ওয়েবসাইট করেছেন, সেখানে সার্চ ইঞ্জিন থেকে, কিংবা অন্যান্য ফ্রি বা পেইড ট্রাফিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে আপনি সাইকেল প্রমোট করছেন। সাধারণত, যারা ক্রেতা, তাঁরা কেবল একটা সাইকেল কিনলেই চলবে না, এরসঙ্গে তাকে হেলমেট, অন্যান্য সাইক্লিং গিয়ারস এবং বডি গিয়ারস কিনতে হবে। আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের মজা হচ্ছে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন কেবল সাইকেলের, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য প্রোডাক্টসমূহ [কারণ আগেই বলেছি, পৃথিবীর অলমোস্ট সব প্রোডাক্টই আমাজন ডটকমে পাওয়া যায়]। আর আমাজনে যেহেতু ফিজিক্যাল প্রোডাক্টই বেশি, অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতারা একের অধিক পণ্য কিনে থাকেন। যেটি ক্লিকব্যাংক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের ক্ষেত্রে কখনো ঘটেই না বলতে গেলে। আর আমাজনে আপনার বিক্রির ভলিউম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাজনও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কমিশন বাড়িয়ে দেয়।
রিলেটেড প্রোডাক্ট
আমাজন ডটকম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কমিশন দেয় তার পাঠানো ভিজিটরের পণ্য কেনার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ আপনি যদি কোন ভিজিটরকে আমাজন ডটকমে পাঠান, তাহলে উক্ত ভিজিটর মোট যত টাকার পণ্য কিনবেন আপনি ঐ সম্পূর্ণ টাকার উপর একটি কমিশন পাবেন। উপরের উদাহরণ ধরেই বলি, আপনি সাইকেল কিনতে চাচ্ছেন এমন একজন ভিজিটরকে আমাজন ডটকমে পাঠালেন। উনি অনেক ঘুরে ফিরে সাইকেল আর কিনলেন না, কিনলেন বডি বিল্ডিংয়ের কিছু ইনস্ট্রুমেন্টস!
এতে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসাবে কিন্তু আপনার কোন লস হচ্ছে না, আপনি উক্ত ভিজিটর যে প্রোডাক্টই কিনুন না কেন, আপনি সেই অ্যামাউন্টের উপর ভিত্তি করে কমিশন পাবেন। আমাজন যেহেতু এই প্ল্যানেটের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট, আর এতে পৃথিবীর অলমোস্ট সব প্রোডাক্টই পাওয়া যায় তাই ক্রেতাও দেখা যায় কিছু না কিছু কিনেই আমাজন ছাড়ছেন!
ক’দিন আগেই আমার রিলেটেড প্রোডাক্ট এক্সামপল নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছিলাম ফেইসবুকে, দেখতে পারেন।
আমাজন প্রোডাক্ট পেইজ নিজেই একটা সেলস পেইজ!
আমাজন ডটকমের প্রোডাক্ট পেইজগুলো কখনো লক্ষ্য করেছেন? ফুল অব ইনফরমেশন! একজন ক্রেতা বায়িং ডিসিশন নেয়ার জন্য সাধারণত যে ধরণের তথ্যগুলো প্রয়োজন তা আমাজন ডটকমে রয়েছে। রয়েছে ইউজার রিভিউ, রেটিং থেকে শুরু করে প্রোডাক্টের একাধিক ছবি কিংবা ভিডিও। আর আমাজনের পেইজটা বেশ কনভার্সন ফ্রেন্ডলি, ভিজিটররা সহজেই তাই বায়ারে কনভার্ট হয়ে যায় এই সাইটে।
আজ মূলত আলোচনা করলাম আমাজন ডটকম অ্যাফিলিয়েট কেন আমি পছন্দ করি, আগামী পর্বে আলোচনা করবো কিভাবে আমাজন ডটকমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন। সে পর্যন্ত, ভাল থাকুন।

1 comment: